অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ভয়াবহ বন্যায় কুমিল্লায় কাজ হারিয়ে বিপাকে প্রায় দেড় লাখ স্বল্প আয়ের মানুষ। জেলার ১৪টি উপজেলায় রাস্তাঘাট-ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে আয় রোজগার। পরিবার-পরিজন নিয়ে ত্রাণ সহায়তায় কোনো রকমে দিন পার করছেন তারা।
কুমিল্লার বুড়িচং এলাকায় জুতা সেলাই করে জীবিকা নির্বাহ করেন ৫৫ বছর বয়সী পরিমল চন্দ্র দাস। বন্যার পানি কারনে কাজ-কর্ম বন্ধ থাকায়। এখন সংসারের খরচ বহন কঠিন হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, স্ত্রী-সন্তানসহ ৪ জনের সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। চোখে-মুখে কোনো পথ দেখতে পাচ্ছিনা। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে মানিক চন্দ্র দাসের পড়াশোনা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি।
খাড়াতাইয়া গ্রামের দিনমজুর আনোয়ার। পরিবার নিয়ে উঠেছেন সোনার বাংলা কলেজ আশ্রয় কেন্দ্রে। বুড়িচং বাজারে ট্রাক থেকে পণ্য ওঠানামানোর কাজ করতেন আনোয়ার। বন্যায় বন্ধ বাজারের সব কার্যক্রম। কবে পানি নামবে আর কাজে ফিরবেন এনিয়ে দুশ্চিন্তায় তিনি।
আনোয়ার বলেন, মাল নামানোর সমস্যা হচ্ছে। গাড়ি আসছে না। কাজ না করলে তো টাকা পয়সাও আসবে না। মানুষ চলাচল করতেই পারছে না। পানি কমলে যদি কাজ আসে। এখন তো কাজ বন্ধ। আনোয়ারের মতো বেকার কুমিল্লার ১৪ উপজেলার প্রায় দেড় লাখ স্বল্প আয়ের মানুষ। পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। একজন ভুক্তভোগী বলেন, আমি তো দিনমজুর। সারাদিন কাজ করি। পানি আমার কাছে কিছু না। আমার ওপরেই সংসারটা চলে।
মৌসুমী আক্তার নামের এক নারী শ্রমিক বলেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঝি’য়ের কাজ করতাম। বন্যায় আমাদের সব কিছু এলোমেলো করে দেয়। কাজ করে মাস শেষে যে টাকা পাইতাম তা দিযে সংসার চালাতাম। এখন কী খাব, কীভাবে চলব, কোনো কিছু ভেবে পাচ্ছি না।
বুড়িচং-কুমিল্লা সড়কে সিএনজি চালক আব্দুর রহিম বলেন, বন্যার পানিতে সড়কটি ভেঙ্গে যায় আজ দু’সপ্তাহের বেশি কোন কাজকর্ম নেই। বেকার বসে আছি। ব্রাক্ষণপাড়ার মহরম আলী জানান, বুড়িচং এলাকায় একটি স’মিলে শ্রমিকের কাজ করতেন তিনি। বন্যার পানির কারনে স’মিলটি বন্ধ থাকায় কোন কাজকর্ম নেই। বেকার হয়ে পড়ায় স্ত্রী সন্তান নিয়ে কষ্টে দিন কাটছে। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যালয় জানান, বন্যার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করা হবে।
এ বিষয়ে জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আবেদ আলী বলেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে। ক্ষুদ্র ঋণ, সুদবিহীন ঋণ, মৎস্য খামার, যুব উন্নয়নের মাধ্যমে ঋণ দেওয়া, ইত্যাদি কর্মসূচির মাধ্যমে তাদেরকে পুনর্বাসন করার একটা পরিকল্পনা সরকারের অবশ্যই আছে। সব সময় ডিপার্টমেন্ট থেকে সুপারিশগুলো একত্রিত করে সরকার শ্রীঘ্রই এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে জানান তিনি।
Leave a Reply